ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন ঘুম আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধুমাত্র বিশ্রাময় নয় বরং শরীর ও মস্তিষ্কের পূর্ণ পুনর্জীবনের সময়। তবে অনেকেই ঘুম থেকে জেগে উঠে শরীর গরম অনুভব করেন।
এমনকি ঘামতেও দেখা যায়। প্রশ্ন জাগে ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন। এর
পিছনে রয়েছে আমাদের শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়া হরমোনের কার্যকলাপ এবং ঘুমের
বিভিন্ন পর্যায়।
পেজসূচিপত্র: ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন .
ভূমিকা
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর গরম কেন হয় শরীর ঠান্ডা হলে
করণীয় কি শারীরিক বা মানসিক চাপ এসব বিষয় জানতে এ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর গরম থাকে কেন
শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ মানব দেহে একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি আছে যাকে
বলে সার্কে্ডিয়ান রিদম এই ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের ঘুম জাগরণ হরমোন নিঃসরণ
এবং শরীরের তাপমাত্রা। সাধারণভাবে শরীরের তাপ অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা রাতের গভীরে
সবচেয়ে নিচে নেমে যায় এবং ভোরের দিকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ফলে ঘুম থেকে উঠার
সময় শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে এটাই অনেক ক্ষেত্রে গরম লাগার প্রধান
কারণ।
ঘুমের সময় হরমোনের পরিবর্তন ঘুমের সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিংসৃত হয়
যেমন
- মেলাটোনিন এটি ঘুমানোর জন্য দায়ী হরমোন রাতের বেলায় মেলাটোনিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং সকালে হ্রাস পায়। মেলাটোনিন কমে যাওয়ার ফলে শরীরে তাপমাত্রা ও রক্ত প্রবাহ বাড়তে পারে ফলে শরীর গরম লাগে।
- কর্টিসল এই হরমোন টি সকালে নিঃসরণ বাড়ে। এটি আমাদের জাগ্রত রাখে এবং বিপাকক্রিয়া বাড়ায় যা শরীরের তাপমাত্রাও কিছুটা বাড়িয়ে তোলে।
ঘুম ও শরীরের উত্তাপ ঘুমের বিভিন্ন পর্যায় আছে এন আর ই এম এবং আর ই এম পর্যায়ে
আমাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ের স্বপ্ন দেখা বেশি হয়। আর
ই এম ঘুমের সময় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয়
হয়ে যায়। ফলে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিবর্তন হতে পারে। যদি কেউ আর ই এম
পর্যায়ে থাকাকালীন হঠাৎ জেগে যায় তবে শরীর গরম অনুভূত হতে পারে।
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন ঘাম ও বেড ক্লাইমেট ঘুমের সময় আমরা অনেকেই
কম্বল বা চাদর দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে ঘুমাই। ঘরের পরিবেশ যদি বন্ধ থাকে তাহলে বেড
ক্লাইমেট অর্থাৎ বিছানার আশেপাশের তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। ঘাম হতে
পারে। ফলে সকালে ঘুম ভাঙলে শরীর গরম ও আদ্র মনে হয়।
শারীরিক ও মানসিক চাপ ঘুমানোর আগে মানসিক উদ্বেগ দুশ্চিন্তা বা চাপ থাকলে আমাদের
স্নায়ু ব্যবস্থা সক্রিয় থাকতে পারে। ঘুমের গভীরতা কম হয় এবং কোটিসল বা
এন্ড্রেনালিনের মত হরমোন বেশি নিংসৃত হতে পারে। এ কারনে শরীর গরম লাগে বা
অতিরিক্ত ঘাম হয়।
রোগ বা ইনফেকশন জনিত কারণ অনেক সময় শরীরে অনেক সংক্রমণ বা ভাইরাস থাকলে শরীর
প্রাকৃতিকভাবে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করে তোলে। এক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা
বেড়ে যায় জ্বর বা সাব ফিবার যা ঘুম থেকে ওঠর পর অনুভূত হয়। শরীর গরম অনুভব
হওয়া তখন অসুস্থতার পূর্বাভাস হতে পারে।
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন রাতের খাবার ও পানীয় প্রভাব রাতে অতিরিক্ত
ঝাল প্রোটিন সমৃদ্ধ বা হালকা ক্যাফিন যুক্ত খাবার খেলে হজম প্রক্রিয়া সক্রিয়
থাকে অনেকক্ষণ। এই বিপাকীয় প্রক্রিয়া শরীরের তাপ উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। অনেক
সময় রাতে অ্যালকোহল সেবন করলেও ঘুম ভাঙ্গার পর শরীর গরম থাকতে পারে।
মেনোপজ ও হরমোন জনিত পরিবর্তন নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা মেনোপজের কাছাকাছি
বা মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাদের শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হট ফ্লাস ও ঘুমের
সময় অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। ফলে সকালে শরীর খুব গরম অনুভব হয়।
চিকিৎসা বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু সম্ভাব্য কারণ
- হাইপার থাইরয়েডরিজন থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন করলে শরীর অতিরিক্ত উত্তাপ তৈরি করে।
- ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত রক্তশর্করার কারণে রক্ত প্রবাহের সমস্যা হতে পারে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা তৈরি করে।
- স্নায়বিক সমস্যা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্র শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়।
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত যদি নিচের
লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
- প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই প্রচন্ড ঘাম বা শরীর গরম লাগে।
- ঘুম ভালো হয় না।
- ক্লান্তি দূর হয় না বা মাথা ঘোরা লাগে।
- তাপমাত্রা সব সময় বেশি থাকে বা জ্বর থাকে।
- ওজন কমে যাচ্ছে বা অতিরিক্ত খাওয়া বমি হচ্ছে।
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম লাগা একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। যা
শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি হরমোনের উঠানামা ঘুমের গঠন এবং বাহ্যিক পরিবেশের উপর
নির্ভর করে। তবে এটি যদি অতিরিক্ত মাত্রায় ঘটে বা শরীরের অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে
যুক্ত হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। স্বাস্থ্যকর ঘুম এবং নিয়মিত
জীবনযাপন এই সমস্যা অনেকাংশ দূর করতে পারে।
শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে করণীয়
শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা হাইপোথারমিয়া একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থা যা তখনই
ঘটে যখন শরীরের তাপমাত্রা বিপদজনক ভাবে কমে যায় ৯৫ ডিগ্রি এফ বা ৩৫ডিগ্রি
সেলসিয়াস এর নিচে। এই অবস্থা সাধারণত অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া ভিজা কাপড় দীর্ঘ
সময় থাকলে বা ঠান্ডা পানিতে পড়ে গেলে দেখা যায়। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এটি
প্রাণঘাতী হতে পারে তাই শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ
পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন শরীর ঠান্ডা হওয়ার লক্ষণগুলো শরীর ঠান্ডা
হয়ে গেলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে
- অতিরিক্ত কাপুনি
- ক্লান্তি বা দুর্বলতা
- কথা জড়িয়ে যাওয়া
- শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসর হয়ে যাওয়া।
- মাথা ঘোরা বা বিভ্রান্তি।
- ত্বক ফ্যাকাসে বা নীলচে হয়ে যাওয়া।
- হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর হয়ে আসা।
এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গরম পরিবেশে নেওয়া প্রথম কাজ হল ব্যক্তিকে একটি গরম ও সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে
যাওয়া যদি বাইরে ঠান্ডায় থাকে তাহলে আশেপাশে কোন আশ্রয়স্থল খুঁজে নিয়ে যেতে
হবে। ঘরের মধ্যে হিটার বা উষ্ণ পরিবেশ থাকালে সবচেয়ে ভালো।
ভিজে কাপড় খুলে ফেলা ভিজে জামা কাপড় শরীরের তাপমাত্রা আরো কমিয়ে দেয়। তাই যত
দ্রুত সম্ভব ভেজা কাপড় খুলে ফেলতে হবে এবং তার পরিবর্তে শুকনো গরম কাপড় পড়াতে
হবে। যদি সম্ভব হয় কম্বল বা উলের কাপড়ে মোড়ানো উচিত।
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেনশরীর গরম করার উপায় অবলম্বন
- গরম পানির বোতল হট প্যাড বা হিটিং ব্ল্যাঙ্কেট ব্যবহার করে ধীরে ধীরে শরীর গরম করুন।
- হাত পা ঘাড় এবং বুকের আশেপাশে গরম প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- সরাসরি গরম পানি বা আগুনে গরম না করার চেষ্টা করুন কারণ এতে চামড়া পুড়ে যেতে পারে।
উষ্ণ পানি খাওয়ানোব্যক্তি যদি সচেতন থাকে এবং গিলতে পারে তাহলে হালকা গরম চা
স্যুপ বা মিষ্টি গরম পানি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন জাতীয়
কিছু দেওয়া উচিত নয় কারণ এগুলো শরীরের তাপমাত্রা আরো কমিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুন:
মোবাইলের লক ভুলে গেলে কিভাবে খুলব
শারীরিক স্পর্শে উষ্ণতা আদান-প্রদান শরীর ঠান্ডা হলে দুইজন উষ্ণ শরীরের ব্যক্তি
একসাথে জড়িয়ে থেকে তা আদান প্রদান করতে পারেন। তবে তা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে
এবং অবশ্যই কোন অস্বস্তিকর অবস্থানে নয়।
শ্বাস প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন নজরে রাখা শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে গেলে শ্বাস
প্রশ্বাস ধীর হয়ে যায় এমনকি অনেক সময় মনে হতে পারে ব্যক্তি মারা গেছে। তাই
অবশ্যই ধৈর্য ধরেই হৃদস্পন্দন ও নিঃশ্বাস পরীক্ষা করা জরুরী। প্রয়োজনে সিপিআর
দিতে হতে পারে।
শেষ কথা
ঘুম থেকে উঠার পর শরীর গরম থাকে কেন শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ
অবস্থা হলেও সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব। প্রাথমিক লক্ষণগুলো বুঝে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহনই হতে পারে জীবন
বাঁচানোর চাবিকাঠি। তাই পরিবার বা আশেপাশের কেউ এই অবস্থায় পড়লে দয়া করে
অবহেলা করবেন না। একটু যত্ন এবং প্রস্তুতি জীবনকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url