স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় স্মৃতিশক্তি মানুষের এক অনন্য সম্পদ। এটি আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা জ্ঞান এবং শিখনকে মনে রাখার ক্ষমতা প্রদান করে। একটি উন্নত স্মৃতিশক্তি শুধু শিক্ষা জীবনেই নয় বরং কর্মজীবন পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

কিন্তু বর্তমান ব্যস্ত জীবনধারা মানসিক চাপ প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিশৃংখল জীবনযাত্রা অনেক সময় আমাদের স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে তোলে। তবে কিছু কার্যকর অভ্যাস ও পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা আমাদের স্মৃতিশক্তি উল্লেখযোগ্য হাড়ে বাড়াতে পারি। 

পেজসূচিপত্র; স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় .

ভূমিকা 

এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যেসব ফল খাবেন। স্মৃতিশক্তি বিষয় সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়

পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর ঘুম স্মৃতি শক্তির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন করে ৭-৮ ঘন্টা গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সারা দিনের তথ্য সংরক্ষণ ও সংগঠনের কাজ করে। রাতে কম ঘুমানো বা ঘুমের অভাব হলে মনোযোগ কমে যায় ফলে নতুন তথ্য স্মৃতিতে গেথেঁ থাকে না।

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের জন্য সঠিক খাদ্যভ্যাস অত্যন্ত জরুরী। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন বি ১২ ই এবং সি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর। মস্তিষ্কের জন্য উপকারী কিছু খাবার হল। 

  • বাদাম বিশেষ করে আখরোট। 
  • তাজা ফল ও শাকসবজি। 
  • মাছে থাকা ওমেগা ৩ যেমন সার্ডিন টুনা। 
  • ডার্ক চকোলেট মডারেট পরিমান। 
  • ডিম 
  • হলুদ উপাদান মস্তিষ্কের কোষের প্রভাব ফেলে। 

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শারীরিক ব্যায়াম শুধু দেহে নয় মস্তিষ্কেও সক্রিয় রাখে। ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায়। যা স্মৃতি সংরক্ষণের সহায়তা করে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাটা জগিং সাঁতার বা যোগব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

আরো পড়ুন: সৌদি এয়ারলাইন্স ঢাকা টু জেদ্দা দাম্মাম রিয়াদ

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় মানসিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে ব্যায়াম করাতে হয়। নতুন কিছু শেখা বই পড়া পাজল দাবা সুধী আলোচনা ইত্যাদি মস্তিষ্কে চর্চিত রাখে। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় মানসিক চর্চায় ব্যয় করলে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। 

মেডিটেশন এবং মনোযোগ বৃদ্ধি ধ্যান বা মেডিটেশন মনকে শান্ত রাখে ও মনোযোগ বাড়ায়। মনোযোগ ছাড়া কিছুই মনে রাখা যায় না। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিটের মেডিটেশন মানসিক চাপ কমিয়ে মনোযোগ ও স্মৃতি উভয় বাড়াতে সাহায্য করে। 

পর্যাপ্ত পানি পান পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক ৭৩% জল দ্বারা গঠিত। পর্যাপ্ত পানি না পেলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। 

পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে মানসিক চাপ স্মৃতিশক্তিকে ক্ষয় করে। কর্টিসোল নামক স্ট্রেস হরমোন অতিরিক্ত মাত্রায় নিঃসরণ হলে তা মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হালকা গান শোনা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো এসব কাজে সাহায্য করে। 

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার বর্তমানে অনেকেই প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন মুখস্ত না করে ফোনে নম্বর রাখা নোট না করে ফটোগ্রাফ তুলে রাখা ইত্যাদি। এতে মস্তিষ্কের নিজস্ব স্মৃতির কার্যক্ষমতা কমে যায়। প্রযুক্তিকে স্মরণশক্তির সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করলেও তা যেন মস্তিষ্কের বিকল্প না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

নিয়মিত পড়াশোনা ও শেখার অভ্যাস শিখতে থাকলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। নতুন ভাষা শেখা কবিতা মুখস্থ করা ইতিহাস পড়া বা অজানা তথ্য জানার চেষ্টা করা এসব অভ্যাস স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত শেখার চর্চা করেন তাদের মধ্যে বয়স জনিত স্মৃতিশক্তি ক্ষয় তুলনামূলক কম হয়। 

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা মানুষ সামাজিক জীব। সম্পর্ক বন্ধুত্ব সংলাপ এসব কিছু মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো হাস্য আলোচনা ইত্যাদি মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখে যা স্মৃতিশক্তির জন্য উপকারী। 

আরো পড়ুন: ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

স্মৃতিশক্তি একদিনে উন্নত হয় না এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে নিয়মিত চর্চা সঠিক অভ্যাস এবং মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমে। মস্তিষ্কে অবহেলা করলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে কিন্তু সচেতন প্রচেষ্টা ও পদ্ধতিগত যত্নের মাধ্যমে এটিকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখা সম্ভব। মনে রাখা দরকার স্মৃতিশক্তি কোন যন্ত্র নয়, এটি যত বেশি ব্যবহার করা হবে ততই তা প্রখর হবে। তাই আজ থেকেই নিজের স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে যান।

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যেসব ফল খাবেন 

স্মৃতিশক্তি মানুষের একটি মূল্যবান সম্পদ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মরণশক্তি প্রাকৃতিক ভাবে কিছুটা হ্রাস পেতে পারে তবে সঠিক খাদ্যের মাধ্যমে একে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ও সুস্থ রাখা সম্ভব। নানা গবেষণায় দেখা গেছে কিছু নির্দিষ্ট ফল রয়েছে যেগুলি নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্ষমতা উন্নত হয় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এই লেখাতে আমরা জানবো এমন কিছু ফলের কথা যেগুলো স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 

ব্লুবেরি ফল ব্লুবেরি বলা হয় ব্রেইন বুস্টার ফল। এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিশেষ করে ইয়া অ্যান্থোসায়ানিন নামক উপাদান যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয় রোধ করে এবং নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্লুবেরি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বয়সজনিত মস্তিষ্ক ক্ষয় ধীর করে। 

আরো পড়ুন: চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় আঙ্গুর ফল আঙ্গুরে রয়েছে রেসভারাট্রল নামক একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা স্নায়ুতন্ত্রের কোর্সের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। কালো আঙ্গুর বিশেষ ভাবে বেশি উপকারী বলে বিবেচিত হয়। 

আপেল প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তার দূরে থাকে এই প্রবাদ শুধু শরীরের জন্য নয় মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপেলে থাকা কুয়ারসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিউরনের ক্ষয় রোধ করে এবং স্মৃতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেলের ফাইবার ও ভিটামিন সি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

কমলা ফল একটি কমলা তে থাকা প্রায় ৯৯% দৈনিক চাহিদার ভিটামিন সি যা মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

কলা তে থাকা ভিটামিন বি৬ ও ট্রিপটোফান নিউরো ট্রান্সমিটার তৈরি করতে সাহায্য করে যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও কলা থেকে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়। যা মস্তিষ্কো সজাগ ও কর্মক্ষম। রাখে। 

অ্যাভোকাডো একটি গুড ফ্যাট সমৃদ্ধ ফল। এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে সহায়তা করে। এটি নিউরনের গঠন বজায় রাখে এবং মানসিক স্থিত রক্ষা করে ফলে মনোযোগ ও স্মৃতি ভালো থাকে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় ড্রাগন ফল ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আন্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা কোর্স রক্ষা করে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখে। এটি স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ফলে মানসিক প্রশান্তি আছে এবং একাগ্রতা বাড়ে। 

আরো পড়ুন: ২৪০ টাকা ফ্রী বিকাশ পেমেন্ট একাউন্ট করুন 

ডাবের পানি ও শ্বাস যদিও এটি সরাসরি ফল নয় তবুও ডাবের পানি ও শ্বাস মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। ডাব মস্তিষ্কের কোষের শক্তি যোগায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। এতে থাকা লরিক এসিড ও মধ্য শৃংখল ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের নিউরো প্রটেকশন বাড়ায়। 

 স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে আরো কিছু পরামর্শ 

  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন। 
  • নিয়মিত ঘুম ঘুম নিশ্চিত করুন। 
  • মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। 
  • নিয়মিত মানসিক ব্যায়াম করুন পাজল বই পড়া বা নতুন কিছু শেখা। 

শেষ কথা

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় মস্তিষ্কের সুস্থতা রক্ষা করা কোন একদিনের কাজ নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সঠিক ফলমূল ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ শোষণ জীবন যাপন এবং মানসিক সচেতনতা এই প্রক্রিয়ার মূল চাবিকাঠি। উপরের ফলগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে শুধু স্মৃতিশক্তিই নয় আপনার সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url