মাথার তালু গরম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
মাথার তালু গরম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার মাথার তালু গরম হওয়া বা উত্তপ্ত অনুভব হওয়ার একটি অস্বাভাবিক কিন্তু সাধারণ উপসর্গ যা নানা কারণ হতে পারে। এটি অনেক সময় স্বাভাবিক এবং ক্ষণস্থায়ী হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা ইঙ্গিত হতে পারে।
মাথার তালু গরম হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো আলোচনা করা হলোপেজসূচিপত্র: মাথার তালু গরম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার .
মাথার তালা তালু গরম হওয়ার কারণ
রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন মাথার তালুতে গরম অনুভব হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হলো
রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন। শরীর যখন অতিরিক্ত উত্তেজিত হয় যেমন মানসিক চাপ উদ্বেগ
ভয় অথবা রাগের সময় তখন সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেম সক্রিয় থাকে। এতে রক্তনালী
গুলো প্রচলিত হয়ে মাথায় রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় ফলে তালুতে উত্তাপ অনুভূতি হয়।
স্নায়বিক সমস্যা কখনো কখনো মাথার তালু গরম লাগার কারণ হতে পারে স্নায়বিক
সমস্যা যেমন নিউরোপ্যাথি বা নার্ভের প্রদাহ। যখন নার্ভ গুলি অতিমাত্রায় উত্তেজিত
বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন তারা ভুল ভাবে উত্তাপ্ত বা জ্বালাপোড়ার সংকেত পাঠাতে
পারে। এতে মাথার তালু গরম বা পোড়া অনুভব হতে পারে।
হরমনের পরিবর্তন বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজ বা হরমোন পরিবর্তনের সময় হট
ফ্ল্যাশ হতে পারে যা শরীরের উপরের অংশ বিশেষ করে মুখ গলা ও মাথায় তাপমাত্রা
বৃদ্ধির মতো অনুভূতি তৈরি করে। এটি রাতের ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং তালু গরম
হওয়ার একটি প্রধান কারণ হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা বা সংক্রমণ মাথার তালুতে ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জনিত
সংক্রমণ হলে ত্বকে প্রধাহ সৃষ্টি হয়। যা তাপ বা পোড়া অনুভব তৈরি করতে পারে।
যেমন ফোলিকিউলাইটিস সেবোরেইক ডার্মাটাইটিস অথবা হের্পেস ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
ইত্যাদি।
আরো পড়ুন:
আখের রস খাওয়ার উপকারিতা
অতিরিক্ত সূর্যের প্রভাব বা হিট স্ট্রোক রোদে অতিরিক্ত সময় কাটালে সূর্যের আলো
মাথার তালুতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এতে স্ক্যাপ্লের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে
তালু গরম হয়ে যায়। কখনো স্ট্রোকের লক্ষণও হতে পারে যা অত্যন্ত গুরুত্ব একটি
অবস্থা।
ওষুধ বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিছু ওষুধ বিশেষ করে স্টেরয়েড অ্যান্টি
ডিপ্রেশেন্টস বা হরমোনাল থেরাপি শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রভাব ফেলতে পারে
এতে মাথার তালু গরম হয়ে যাওয়া ঘাম বা জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা উদ্বেগ জনিত রোগ প্যানিক অ্যাটাক অথবা অবসাদ মাথার
তালুতে অস্বস্তি বা গরম লাগার অনুভূতির সাথে জড়িত থাকতে পারে। এই উপসর্গগুলি
মানসিক অস্থিরতার শারীরিক প্রকাশ হিসেবে দেখা যায়।
অ্যালার্জি বা রিঅ্যাকশন চুলে ব্যবহৃত কোন কেমিক্যাল যেমন হেয়ার ডাই শ্যাম্পু বা
অন্য প্রসাধনী দ্রব্য অ্যালার্জি হলে মাথার তালুতে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। একে
গরম লাগা চুলকানি ও ফোলা দেখা দিতে পারে।
মাথার তালু গরম নানা কারণে হতে পারে স্বল্প মেয়াদী ও নিরীহ কোন কারণ যেমন
আবহাওয়া পরিবর্তন আবার গুরুতর কোন স্বাস্থ্য সমস্যা এর পিছনে থাকতে পারে। যদি এই
উপসর্গটি বারবার হয় দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য উপসর্গের সাথে যুক্ত হয় যেমন
মাথাব্যথা দুর্বলতা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদি তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের
পরামর্শ নেয়া উচিত। নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকা এবং সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত
করে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণই সুস্থতার চাবিকাঠি।
শরীর গরম হলে কি খাওয়া উচিত
শরীর গরম বা বডি হিট হওয়া একটি সাধারণ শারীরিক অবস্থা বিভিন্ন কারণে হতে পারে
বিশেষ করে গরম আবহাওয়া দীর্ঘ সময় রোদে থাকা পানি শূন্যতা বেশি মসলাদার খাবার
খাওয়া বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শরীর গরম হওয়ার কারন হতে পারে শরীর অতিরিক্ত
উত্তাপ হলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন মাথা ঘোরা দুর্বলতা অতিরিক্ত ঘাম
ত্বকে জ্বালাপোড়া বা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এ অবস্থায় সঠিক খাদ্য গ্রহণের
মাধ্যমে শরীরকে ঠান্ডা রাখার সম্ভাব্য জেনে নিই শরীর গরম হলে কি কি খাবার খাওয়া
উচিত এবং কি কি খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন শরীর গরম হলে পানি শূন্যতা দেখাদেয় তাই প্রথম কাজ হল
শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করা দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। বিশুদ্ধ
ঠান্ডা পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে
ঠান্ডা রাখে। আপনি চাইলেই পানির সঙ্গে লেবুর রস বা এক চিমটি লবনও মিশিয়ে নিতে
পারেন। এটি ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট। এতে আছে পটাশিয়াম সোডিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজ উপাদান যা শরীরে গরম কমাতে এবং পানির ঘাটতি পূরণে
অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস ডাবের পানি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ত্বক
সতেজ থাকে।
ঠান্ডা ফলমূল খান ফলমূলের মধ্যে অনেক ফল আছে যেগুলো শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য
করে।
- তরমুজ তরমুজের ৯০% এর বেশি পানি থাকে। এটি শরীরে পানি শূন্যতা দূর করে এবং ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- শশাঁ এটি একটি খুবই হাইড্রেটিং সবজি এতে প্রচুর পানি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।
- পেঁপে হজমে সাহায্য করে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে পারে।
- লেবু লেবুর শরবত গরমে আরাম দেয় এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
- আঙ্গুর ও কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এসব ফলে ত্বক ভালো থাকে ও শরীর ঠান্ডা থাকে।
দই একটি প্রাকৃতিক কুলার হিসেবে কাজ করে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের
তাপমাত্রা কমাতে দারুন কার্যকর আপনি চাইলে দইয়ের সঙ্গে কলা বা শসাঁ মিশিয়ে খেতে
পারেন অথবা লস্যি বানিয়ে খেতে পারেন।
আরো পড়ুন:
কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
ভাতের মাড় গ্রামবাংলায় প্রচলিত এই খাদ্য উপাদানটি গরমে খুব উপকারী। চাল সিদ্ধ
করে তার মাড় ফেলে না দিয়ে ঠান্ডা করে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং হজম শক্তি
বাড়ে।
ঠান্ডা দুধ শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে বিশেষ করে দুধের সঙ্গে কলা খেজুর বা
অন্যান্য ঠান্ডা ফল মিশিয়ে মিল্কশেক বানালে তা আরো উপকারী হয়ে ওঠে। তবে
অতিরিক্ত চিনি না দেয়াই ভালো।
লাউ পুঁইশাক পটল ও করলা জাতীয় শাকসবজি এসব সবজি গুলোর মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা
প্রকৃতির গুণ। লাউ ও পুঁইশাক হজমে সহায়তা করে এবং শরীরের উত্তাপ কমাতে
সাহায্য করে। করলা একটু তিতা হলেও এটি লিভার পরিষ্কার রাখে এবং শরীর ঠান্ডা করে।
হারবাল পানীয় হালকা চা তুলসী পুদিনা আদা ও মধু দিয়ে বানানো হালকা হারবাল যা
শরীরে অভ্যন্তরীণ উত্তাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুদিনার শরবত ঠান্ডা
রাখে।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
- অতিরিক্ত মসলাদার খাবার
- খুব তেলে ভাজা খাবার
- ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় যেমন কফি বেশি চা
- অ্যালকোহল
- চকলেট বা খুব মিষ্টি খাবার
- গরম গরম ঝাল মাংস বা গরুর মাংস
- ফাস্টফুড বা প্রসেসড ফুড
এই খাবারগুলো শরীরে তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে তাই এগুলো এড়িয়ে চলা
ভালো।
শেষ কথা
শরীর গরম হলে খাবার নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ঠান্ডা ও প্রকৃতির
খাবার যেমন ফল শাকসবজি পর্যাপ্ত পানি ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানিও গ্রহণের মাধ্যমে
শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখা সম্ভব। পাশাপাশি জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন যেমন
পর্যাপ্ত বিশ্রাম রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার হালকা কাপড় পরা ইত্যাদি ও সাহায্য
করে। শরীরে গরমের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে সঠিক খাদ্য গ্রহণ ও প্রয়োজনে
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url