গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

আখের রস খাওয়ার উপকারিতা

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা প্রচন্ড গরমে যখন শরীর হাঁসফাঁস করে তখন এক গ্লাস ঠান্ডা গুড়ের শরবত যেন স্বর্গীয় শান্তি নিয়ে আসে। বিশেষ করে আখের গুড় দিয়ে তৈরি শরবত শুধু স্বাদেই নয় পুষ্টিগুনে ভরপুর। বাংলার গ্রামীন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে গুড়ের শরবতের কদর অনেক পুরনো।

যদিও আমরা সাধারণত শীতকালে গুড় খাই তবে গ্রীষ্মকালেও এর ব্যবহার এবং উপকারিতা কম নয়। বিশেষ করে আখের গুড় দিয়ে তৈরি শরবত গরমের ক্লান্তি দূর করতে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতায় অনন্য। 

পেজসুচিপত্র: গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা .

ভূমিকা 

এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব প্রচন্ড গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা শরবত তৈরীর নিয়ম শরবত খাওয়ার নিয়ম আরও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা প্রাকৃতিক শক্তি জগায় গরমে ঘাম বা ক্লান্তিতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময়ে আখের গুড়ের শরবত একটি প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক হিসেবে কাজ করে। এতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা শরীরের দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে ক্লান্তি দূর করে ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়। 

শরীর ঠান্ডা রাখে আখের গুড়ের শরবত শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গরমে যাদের ঘাম বেশি হয় বা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে তাদের জন্য এই শরবত অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে ও অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি দেয়। 

হজমে সহায়তা করে আখের গুড় হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এটি পাচনতন্ত্রকে সচল রাখে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও অম্বলের সমস্যা হ্রাস করে। শরবতের সঙ্গে এক চিমটি লবণ বা লেবুর রস যোগ করলে হজম ক্ষমতা আরো বেড়ে যায়। 

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে গ্রীষ্মকালে প্রচুর ঘামের কারণে শরীর থেকে জল ও ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায় ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। গুড়ের শরবত পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও সডিয়াম এর উৎস হিসেবে কাজ করে যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে। 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা রক্তশূন্যতা রোধ সহায়ক গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য এই শরবত নিয়মিত পান করা উপকারী। 

আরো পড়ুন: বেল পাতা রসের ১৩ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় আখের গুড় শরীরের জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে ফলে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়। নিয়মিত গুড়ের শরবত পান করলে ব্রণ র‌্যাশ ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা কমে আসে। 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা যকৃত ও কিডনির জন্য উপকার আখের গুড় প্রাকৃতিক ডিটক্সি ফায়ার হিসেবে কাজ করে এটি যকৃত লিভার পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করে। হলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে পারে না। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে গুড়ে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যারা উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত সামান্য লবণ ও গুড়ের শরবত খেলে উপকার পেতে পারে। 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা মাসিকের সময় স্বস্তি দেয় নারীদের জন্য মাসিকের সময় আখের গুড়ের শরবত ব্যথা কমাতে ও মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। গুড়ে থাকা মিনারেল ও গ্লুকোজ পেশির টান কমায় এবং মুড ভালো রাখে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আখের গুড়ে থাকা নানা খনিজ ও এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শরীরকে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। 

গরমকালে আখের গুড়ের শরবত শুধু স্বাদের নয় স্বাথ্যের এক অনন্য সাথী। এটি আমাদের শরীরকে সতেজ রাখে অভ্যন্তরীণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে হজম ও রক্তচাপ ঠিক রাখে এবং নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক ও উপস্থিত উপাদানে ভরপুর এই শরবত গ্রীসের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন নির্দ্বিধায়। তাই বাজার থেকে কিছু খাঁটি গুড় নিয়ে আসুন আর প্রতিদিন উপভোগ করুন এক গ্লাস প্রাকৃতিক প্রশান্তি। 

আখের গুড়ের শরবত বানানোর নিয়ম 

আখের গুড়ের শরবত একটি জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় যা গরমে দারুন আরাম দেয়। অতি সহজে তৈরি করা যায় এবং প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হওয়ায় স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। নিচে আখের গুড়ের শরবত তৈরীর একটি সহযোগী বিস্তারিত প্রণালী দেওয়া হল। 

প্রয়োজনীয় উপকরণ 

• আখের গুড় ১-২ কাপ চূর্ণ বা তরল হলে আরো ভালো। 
• ঠান্ডা পানি ৩ কাপ। 
• লেবুর রস ২ চামচ ইচ্ছামতো বাড়ানো কমানো যায়। 
• ভাঙ্গা বরফ এক কাপ। 
• বিট লবণ বা সাধারণ লবণ প্রয়োজন অনুযায়ী। 
• পুদিনা পাতা সাজানোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী। 

প্রস্তুত প্রণালী 

• প্রথমে একটি বাটিতে আখের গুড় নিন। যদি এটি শক্ত অবস্থায় থাকে তবে আগে একটু গরম পানিতে গলিয়ে নিন। যাতে ভালোভাবে মিশে যায়। 
• এবার ঠান্ডা পানি গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিন ভালোভাবে নারুন যাতে গুড় সম্পূর্ণ মিশে যায়। 
• এরপর এতে লেবুর রস যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। 
• এবার বিট লবণ মেশান। এই উপাদানগুলো শরবতকে একটি মজাদার ও হালকা স্বাদ দেবে।
• শেষে বরফ দিয়ে গ্লাসে শরবত ঢালুন। 

গরমের দিনে এটি ঠান্ডা পানীয় হিসেবে অসাধারণ। গুড় প্রাকৃতিক চিনি হিসেবে কাজ করে এবং হজমেও সাহায্য করে। এভাবে তৈরি আখের গুড়ের শরবত স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক ও সুস্বাদু এটি বাড়িতে সহজে তৈরি করে পরিবারের সবাইকে পরিবেশন করা যায়। 

আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার নিয়ম 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা গরমকালে আখের গুড়ের শরবত খাওয়া শুধু রুচিকর নয় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই শরবত প্রাকৃতিক মিষ্টির একটি উৎস যা গ্রীষ্মকালে তাপদাহে দেহকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তবে এর উপকারিতা পেতে হলে সঠিক নিয়মে এবং পরিমিত ভাবে শরবত গ্রহণ করা জরুরী। 

আরো পড়ুন: ডাবের পানি খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা

শরবত তৈরি পদ্ধতি ও সঠিক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে শরবত পান না করাই ভালো। বরং সকালের হালকা নাস্তার ৩০ মিনিট পর বা দুপুরের খাবারের এক ঘন্টা পরে এটি খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। বিকেলের দিকে শরীর ক্লান্ত এবং জলের ঘাটতি হলে এ শরবত বিশেষ কার্যকর। যেহেতু আখের গুড় গরম প্রকৃতির তাই শরবতের সঙ্গে ঠান্ডা জল লেবুর রস এবং সামান্য বিট লবণ মিশিয়ে খেলে এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। 

পরিমাণের নিয়ম প্রতি গ্লাস শরবতে এক চা চামচ গুড়ই যথেষ্ট। বেশি পরিমাণ গুড় শরীরে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। দিনে একবার বা সর্বোচ্চ দুই বার এ শরবত খাওয়া নিরাপদ। অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস অম্বল কিংবা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

যাদের সতর্ক থাকা দরকার 

গরমে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগী উচ্চ রক্তচাপ বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার এমন ব্যক্তিদের এই শরবত খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।  কারণ গুড়ে প্রাকৃতিক চিনে থাকলেও তা রক্তে গ্লকোজ বাড়াতে পারে। 

সব মিলিয়ে গরমে আখের গুড়ের শরবত একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর পানীয় যদি তা পরিমিত এবং সঠিক নিয়মে গ্রহণ করা হয়। নিয়ম মেনে খেলে এটি আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে এবং গ্রীষ্মকালীন ক্লান্তি দূর করতে কার্যকর হবে।