গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে

গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপদাহ অস্বস্তিকর আবহাওয়া এবং ঘাম ঝরা দিনগুলোতে এক গ্লাস ঠান্ডা ডাবের পানি যেন শান্তির পরশ। অনেকে মনে করেন গরমে ডাবের পানি খেলে শরীর ঠান্ডা হয় তৃষ্ণা মেটে ক্লান্তি কেটে যায় এবং শরীরে প্রাণ ফিরে। 
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে আসলে কি ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা করে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি আছে কি। 

পেজসূচিপত্র: গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে .

ভূমিকা

এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে কখন খাবেন কিভাবে খাবেন এসব বিষয় জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে 

তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ডাবের পানি খুব হালকা এবং সহজে পরিপাক যোগ্য। এতে পানির পরিমাণ প্রচুর ফলে এটি শরীরে দ্রুত শোষিত হয় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। ঠান্ডা পানি যেহেতু শরীরে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এটি কুলিং এফেক্ট সৃষ্টি করে যা মুহূর্তের মধ্যে প্রশান্তি এনে দেয়।
 
গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে ডাবের পানিতে থাকা প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট যেমন পটাশিয়াম সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ঘামের মাধ্যমে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয় তা পূরণ করে। এর ফলে শরীরের কোর্সগুলো পুনরুজ্জীবিত হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়। 
 
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে গরমে শরীর দ্রুত পানি হারায় ডাবের পানি একদিকে পানি সরবরাহ করে অন্যদিকে প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান সরবরাহের মাধ্যমে শরীর তরল সমতা ঠিক রাখে। ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয় না মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা দেখা দেয় না। 
 
 
গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে গ্রীষ্মকালে অনেকেই হজমের সমস্যায় ভোগে ডাবের পানি হালকা ও সহজপাচ্য হাওয়ায় এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে শরীর চাঙ্গা অনুভব করে। 
 
বাংলাদেশ ভারত শ্রীলংকা থাইল্যান্ড সহ অনেক দেশে লোকজ ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা করে। গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায় জ্বর হলে বা হিট স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে ডাবের পানি খাওয়ানো হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ডাবের পানি প্রাকৃতিক পানীয় হিসেবে পরিচিত। 

ডাবের পানির উপাদান 

গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে ডাব বা সবুজ নারিকেলে পানি এক ধরনের প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট পানীয়। এটি নারিকেলের অঙ্কুরে থাকা স্বচ্ছ তরল যা ডাব পাকার আগ পর্যন্ত ভিতরে জমা হয়। এর প্রধান উপাদান সমূহ হলো 
  • পানি ৯৪-৯৬% 
  • খনিজ লবণ পটাশিয়াম সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম। 
  • প্রাকৃতিক চিনির অল্প পরিমাণ গ্লুকোজ ও ফরুক্টোজ
  • অ্যামাইনো অ্যাসিড। 
  • ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স। 
 এই উপাদানগুলো শরীরের হাইজেসন বা জলের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

কেন গরমে শরীর গরম হয় 

গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া খুব গরম থাকার ফলে শরীর ঘামের মাধ্যমে তাপ নিঃসরণ করে। ঘামের মাধ্যমে শুধু পানি নয় ইলেক্ট্রোলাইট বা লবন বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে মাথা ঘোরা হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় এমন পানিও প্রয়োজন যা একদিকে শরীর ঠান্ডা করবে এবং অন্যদিকে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করবে। 

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে 

বর্তমানে অনেক গবেষণা হয়েছে ডাবের পানির উপকারিতা নিয়ে। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিজনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে ডাবের পানি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক রিহাইড্রেশন সলিউশন যা ও আর এস খাবার স্যালাইন থেকেও কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া বা বমি ভাবের সময় এটি পান করানো হলে দ্রুত আরোগ্য লাভ ঘটে। 
 
 
গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে কারা খাবেন কারা খাবেন না ডাবের পানি সাধারণত সবাই খেতে পারে তবে কিছু বিশেষ অবস্থা যেমন।
  • ডায়াবেটিস ডাবের পানিতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। 
  • কিডনি রোগী অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাই কিডনি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শে খাবেন। 
  • ঠান্ডা লাগা বা কাশি থাকলে ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা করে দিতে পারে তাই পরিমিত খেতে হবে। 

কখন খাবেন 

গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে সকাল বা দুপুরে ডাবের পানি খাওয়া সবচেয়ে উপযোগী। খালি পেটে খেলে এটি হজমে সাহায্য করে এবং শরীর সতেজ রাখে। তবে একদম বরফ শীতল করে খেলে গলা বসে যেতে পারে তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বা হালকা ঠান্ডা করে খাওয়ায় ভালো। 

অন্যান্য উপকারিতা

  • প্রসব পরিষ্কার করে। 
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। 
  • শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। 
  • ক্লান্তি ও মাথা ব্যাথা দূর করে। 

শেষ কথা 

গরমে ডাবের পানি খেলে কি ঠান্ডা লাগে সব দিক বিবেচনা করলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, গরমে ডাবের পানি খেলে শরীর ঠান্ডা হয়। এটি শুধু অনুভূতি গত নয়, বৈজ্ঞানিক ভাবেও সত্য। প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট প্রচুর পরিমাণ পানি মিনারেলস ও হালকা স্বাদের কারণে ডাবের পানি গ্রীষ্মকালের শ্রেষ্ঠ পানীয়। এটি যেমন ক্লান্তি দূর করে তেমনি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং ভেতর থেকে সতেজ প্রদান করে। 
তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। তাই পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে ডাবের পানি পান করলেই এর সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url