কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়
আপেল এ কি ভিটামিন আছে জানলে অবাক হবেন
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় ভিটামিন হলো এক ধরনের অতি প্রয়োজনীয় জৈব যৌগ যা শরীরের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আমাদের শরীর নিজে থেকে বেশির ভাগ ভিটামিন তৈরি করতে পারে না। তাই খাদ্য থেকেই এগুলো সংগ্রহ করতে হয়।
যদি দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাসে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতি থাকে তবে তা শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে করে যার মধ্যে অন্যতম হলো শরীরের দুর্বলতা বা ক্লান্তি ভাব।পেজসূচিপত্র: কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় .
ভূমিকা
আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় এসব ভিটামিনের কাজ কি ভিটামিনের অভাবে লক্ষণগুলো কি হতে পারে এবং কোন খাবার থেকে এগুলো পাওয়া যায়। তাই বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভিটামিন বি১ শরীরের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে রূপান্তর করে এবং নার্ভ সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ভিটামিন বি১ এর অভাবের লক্ষণ
- শারীরিক দুর্বলতা
- মাংসপেশিতে ব্যথা
- মানসিক বিভ্রান্তি
- হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন
ভিটামিন বি২ রাইবোফ্লাভিন শরীরের শক্তি উৎপাদন এবং কোষের বৃদ্ধি ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি২ ঘাটতির লক্ষণ
- চোখে জ্বালা
- জিব্বা ফোলা
- ঠোঁট ফাটা দুর্বলতা
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
ভিটামিন বি৬ পাইরিডক্সিন ভিটামিন বি৬ স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট বিপাকে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি৬ ঘাটতির লক্ষণ- শারীরিক ক্লান্তি অবসাদ
- ঘুমের সমস্যা
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় ভিটামিন বি১২ কোবালামিন ভিটামিন বি১২ রক্ত তৈরি স্নায়ুতন্ত্র রক্ষা ও ডি এন এ সংশ্লেষে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শক্তির উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন বি১২ অভাবের লক্ষণ
- অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- হাত-পায়ে ঝিঝি অনুভব
- স্মৃতিভ্রংশ রক্ত
- শূন্যতা।
ভিটামিন সি অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ভিটামিন সি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এটি আয়রনের শোষণে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি এর অভাব
- সহজে ক্লান্ত হওয়া
- দেহের শক্তি কমে যাওয়া
- নারীর রক্তপাত
- ত্বকে কালো দাগ
- স্কার্ভি রোগ।
ভিটামিন ডি চিকোলেকালশিফেরল ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ ঘটাতে সাহায্য করে এবং হাড় মজবুত রাখে।
ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষণ
- মাংসপেশী দুর্বলতা
- হাড় ব্যথা
- ক্লান্তি ভাব
- মানসিক অবসাদ
- বারবার ঠান্ডা লাগা।
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় ভিটামিন ই টোকোফেরোল ভিটামিন ই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে কোষকে রক্ষা করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।
আরো পড়ুন: বেল পাতা রসের ১৩ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
ভিটামিন ই এর অভাবের লক্ষণ
- দুর্বলতা
- দৃষ্টি সমস্যার শুরু
- নার্ভ সিস্টেমের সমস্যা
- চুল ঝরে যাওয়া
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
ভিটামিন বি৯ এর অভাব
- ক্লান্তি ভাব
- ক্ষুধামন্দা
- মুখে ঘা
- শ্বাসকষ্ট
- রক্তশূন্যতা।
শরীর দুর্বল হলে করণীয়
- প্রোটিন ডিম মাছ মুরগি ডাল সয়াবিন
- শর্করা চাল রুটি আলু।
- ভিটামিন শাকসবজি ফলমূল বিশেষ করে ভিটামিন বি ও সি।
- আইরন পালংশাক কলিজা ডাল আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া হয় যা দুর্বলতার অন্যতম প্রধান কারণ।
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় পর্যাপ্ত পানি পান শরীরে পানির ঘাটতি ডিহাইড্রেশন হলে দুর্বলতা মাথা ঘোরা ক্লান্তি দেখা দেয় প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। ঘাম হলে বা গরম কালে পানি চাহিদা আরো বাড়ে। এছাড়া ডাবের পানি ফলের রস ইত্যাদি শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম ও পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের অভাবে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দুর্বলতা তৈরি হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুম ঠিক না হলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে না মনোযোগ কমে যায় এবং শরীরে ক্লান্তি ভর করে।
নিয়মিত ব্যায়াম অনেকে ভাবেন দুর্বল হলে বিশ্রাম হয় সবচেয়ে ভালো কিন্তু সঠিক মাত্রায় ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং এনডোর প্রিন হরমোন নিঃসরণ করে যা শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। হালকা যোগ ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং শরীর কে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
মানসিক চাপ কমানো মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা শরীরকে দুর্বল করে দেয় দীর্ঘ সময় ধরে চাপের মধ্যে থাকলে কোটিসল নামক হরমোন নিঃসরণ হয় যা শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়। চাপ কমাতে মেডিটেশন প্রার্থনা বই পড়া বা প্রিয় কোন কাজে সময় দেওয়া যেতে পারে।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় অনেক সময় দীর্ঘ মেয়াদী দুর্বলতার পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কোন শারীরিক সমস্যা যেমন অ্যানিমিয়া রক্তশূন্যতা থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা ডায়াবেটিস ভিটামিন ডি বা ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি। তাই নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে দুর্বলতার আসল কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন:
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ভিটামিন ও মিনারেল সম্প্লিমেন্ট যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন বা খনিজ না
পাওয়া যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাম্প্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে
পারে। বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বি১২ আইরন ভিটামিন ডি এগুলো দুর্বলতা কমাতে
সহায়ক।
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার এই অভ্যাসগুলো শরীরের কোষকে ধ্বংস করে এবং শক্তি উৎপাদনের পথে বাধা দেয়। এসব বাদ দিলে শরীর দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
সুষম জীবন যাপন শরীর এবং মনের ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত ও সুশৃংখল জীবন যাপন গুরুত্বপূর্ণ। সময় মত খাওয়া ঘুম কাজ এবং বিশ্রামের একটি রুটিন মেনে চললে শরীর দুর্বলতা হয় না।
শরীর দুর্বল হয়ে পড়া একটি সতর্ক বার্তা। এটি সাময়িক কোনো সমস্যা থেকেও হতে
পারে, আবার লুকিয়ে থাকা কোন জটিল রোগের উপসর্গ হতে পারে। তাই দুর্বলতা অনুভব
করলে অবহেলা না করে সচেতন ভাবে খাদ্য বিশ্রাম এবং মেডিকেল চেকআপের দিকে গুরুত্ব
দিতে হবে। সুস্থ শরীর ও মন পেতে হলে জীবন যাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তনই হতে
পারে বড় সমাধান।
শরীর দুর্বলতা দূর করার টিপস
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ফ্যাটের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ অন্তর্ভুক্ত করুন।
প্রাকৃতিক উৎসবে অগ্রাধিকার দিন কৃত্রিম সামপ্লিমেন্টের চেয়ে প্রাকৃতির উৎস থেকে ভিটামিন গ্রহণ বেশি উপকারী।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন ডিহাইড্রেশন দুর্বলতার অন্যতম কারণ। দিনে অন্তত ৮-১০ পানি পান করুন।
আরো পড়ুন:
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিয়মিত রোদে থাকুন সূর্যের রশি ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস। তাই দিনে কিছু সময় রোদে থাকা জরুরি।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন যদি দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
শেষ কথা
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় ভিটামিনের ঘাটতি শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে তোলে এবং বিভিন্ন রোগে সৃষ্টি করে। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারিনা যে ক্লান্তি ভাব বা অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়ার পিছনে কোন ভিটামিনের অভাব কাজ করছে।। তাই দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাসে ভিটামিন সবৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী।
ভিটামিনের অভাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে সচেতন হতে হবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন
করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।। তাহলেই আমরা পেতে পারি এক
শক্তিশালী সুস্থ ও কর্মক্ষম দেহ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url