গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা

গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা বাংলার গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা প্রায় অসহনীয় হয়ে ওঠে। এই গরমে শরীর ও মন সতেজ রাখার জন্য প্রাকৃতিক পানির বিকল্প নেই। তেমনেই এক উপকারী পানীয় হলো বেলের শরবত। 
বেল একটি ভেষজ ফল যার স্বাদ ও গন্ধ যেমন মন মুগ্ধকর তেমনি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অসাধারণ। গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

পেজসূচিপত্র: গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা .

গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা

তাপদাহ থেকে রক্ষা করে গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘাম এবং শরীরে পানি শূন্যতার কারণে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেলের শরবত প্রাকৃতিক ভাবে শরীর ঠান্ডা রাখে এবং তাপদাহের প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। এটি শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা করে ফলে বাইরে যতই গরম হোক শরীরে ভিতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। 
 
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে কার্যকর গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে লবণ ও জল বেরিয়ে যায় ফলে সমস্যা দেখা দেয়। বেলের শরবত শরীরকে আদ্র রাখে এবং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক শরীরকে দ্রুত পুনরূপ জীবিত করে।
 
হুজমে সহায়ক বেল প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, এটি গ্যাস্ট্রিক অম্বল বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুবই উপকারী। বেলের মধ্যে থাকা ট্যানিন মিউসিলেজ ও ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সচল রাখে। বিশেষ করে যারা গরমকালে হজমের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য বেলের শরবত একটি প্রাকৃতিক টনিকের মত কাজ করে। 
 
ইনফেকশন প্রতিরোধ করে বেল ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ভাইরাল গুণ রয়েছে যা ডায়রিয়া আমাশয় ও বিভিন্ন অন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষ করে গরমকালে সংক্রমক রোগ ছড়িয়ে পড়া প্রবণতা বেশি থাকে। তাই নিয়মিত বেলের শরবত খেলে এই ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। 
 
লিভার পরিষ্কারে সহায়ক বেল লিভার ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা করে। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হেপাটাইটিসের মতো সমস্যার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। বেলের শরবতে থাকা পুষ্টিগণ লিভারের টক্সিন বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে। 
 
 
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে যদিও বেল স্বাদে মিষ্টি তবে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে বেল গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে নিম্ন হওয়ায় এটি ধীরে ধীরে গ্লুকোজ নিঃসরণ করে। ডায়াবেটিক রোগীরা চিনি ছাড়া বেলের শরবত খেলে উপকার পেতে পারে। 
 
চর্মরোগ প্রতিরোধে উপকারী বেল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে। গরমে অনেকের ত্বকে ঘামাচি র‌্যাশ বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। বেলের শরবত নিয়মিত পান করলে এই সব চর্মরোগ কমে যায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। 
 
গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে গ্রীষ্মকালে ক্লান্তি দুর্বলতা ও অবসাদ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।। বেলের শরবতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল শরীরে শক্তি যোগায়। এটি শরীরকে চাঙ্গা রাখে এবং সারা দিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জি সরবরাহ করে। 
 
প্রাকৃতিক ডিটক্স ড্রিংক বেল শরবত প্রাকৃতিক ভাবে কিডনি ও অন্ত্রের পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেই ফলে শরীর থাকে হালকা ও সুস্থ। নিয়মিত বেলের শরবত খেলে দেহের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। 
 
মানসিক প্রশান্তি দেয় বেলের ঘ্রাণ এবং ঠান্ডা স্বভাব মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এটি মস্তিষ্কে শীতল রাখে এবং গরমে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতা ও বিরক্তি কমায় অনিদ্রা ও মাথা ব্যথার ক্ষেত্রেও এটি উপকারী হতে পারে। 

বেলের শরবত বানানোর নিয়ম 

গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা বেলের শরবত একটি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর পানীয়। বিশেষ করে গরমের দিনে এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে দারুন কাজ করে। বেল ফলটি পুষ্টিকর এবং আয়ুর্বেদিক গুণে ভরপুর। এতে রয়েছে ভিটামিন সি ভিটামিন এ ফাইবার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং নানা প্রকার খনিজ পদার্থ। 
এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, কনস্টিপেশন কমায় পেট ঠান্ডা রাখে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এখন চলুন দেখেনি কিভাবে সহজে বাড়িতে বেলের শরবত বানানো যায়। 
 
উপকরণ 
  • পাকা বেল একটি মাঝারি বা বড় সাইজ। 
  • ঠান্ডা পানি ৩-৪ কাপ। 
  • চিনি পরিমাণ মতো সাধারণত ৪-৫ চা চামচ। 
  • লেবুর রস ১ চা চামচ। 
  • বিট লবণ বা সাদা লবণ এক চিমটি। 
  • বরফ কুচি প্রয়োজন মত। 
প্রণালী 
বেল কাটা ও পাল্প বের করা প্রথমে পাকা বেল টি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর একটি ধারালো ছুরি দিয়ে মাঝ বরাবর কেটে নিন। ভেতরের পাল্প গুলাপি বা হলুদাভা অংশ একটি বড় বাটিতে চামচ দিয়ে বের করে নিন। বেল ফল সাধারণত অনেক আঁচ যুক্ত হয় তাই যতটা সম্ভব পাল্প তুলে নেওযর চেষ্টা করুন।
 
জল মিশিয়ে গলানো পাল্পের সঙ্গে দুই তিন কাপ ঠান্ডা পানি দিন এবং হাত বা চামচ দিয়ে ভালোভাবে মথে নিন যাতে পাল্প পুরোপুরি পানিতে মিশে যায়। এতে বেলের স্বাদ ও ঘনত্ব ভালো ভাবে পানিতে চলে আসবে। 
 
 
গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা ছেঁকে নেওয়া এবার একটি ছাঁকনী (স্টেইনার বা চালনিও বলা হয়) দিয়ে মিশ্রণটি ছেকে নিন। বেলের আঁশ এবং বীজ আলাদা হয়ে যাবে এবং আপনি এক ধরনের ঘন তরল রস পাবেন। 
 
চিনি ও লবণ যোগ করা ছাঁকা রসে চিনি যোগ করুন। চিনি মিশিয়ে ভালো ভাবে নাড়ুন যতক্ষন না পুরোপুরি গলে যায়। চাইলে এক চিমটি বিট লবণ বা সাদা লবণ দিন এটি শরবতের স্বাদ আরো বাড়িয়ে তোলে। কেউ কেউ একটু লেবুর রসও যোগ করেন যাতে শরবতে টক মিষ্টি মিশ্র স্বাদ আসে। 
 
ঠান্ডা করা ও পরিবেশন এবার শরবতটিকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করতে পারেন অথবা সরাসরি বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। একটি গ্লাসে শরবত ঢেলে তার ওপর কয়েকটি বরফ কুচি ফেলে দিন। চাইলে পুদিনা পাতা বা লেবুর স্লাইস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারে। 
 
অতিরিক্ত টিপস
 
  • চাইলে বেলের শরবতে দই মিশিয়ে লস্যি জাতীয় একটি পানীয় বানানো যায়। 
  • যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা চিনি বাদ দিয়ে বা স্বল্প পরিমাণ হানি/মধু দিয়ে শরবত বানাতে পারেন। 
  • বেল ঠান্ডা প্রকৃতির ফল তাই নিয়মিত সকালে খালি পেটে এটি পান করলে গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। 

বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম

গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা বেল একটি পুষ্টিকর ও ওষুধিগুনে ভরপুর ফল। এটি গ্রীষ্মকালে বিশেষ উপকারী বিশেষ করে শরবতের মাধ্যমে বেল গ্রহণ করলে শরীর ঠান্ডা রাখে এবং নানা রোগ প্রতিরোধ করে। তবে বেলের শরবত খাওয়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে চললে এর উপকারিতা আরও বেশি পাওয়া যায়। 
 
 
  • বেলের শরবত খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। খাবারের ৩০ মিনিট পর বা বিকেলের দিকে খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত। 
  • দিনে একবার বেলের শরবত খেলে যথেষ্ট । অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
  • শিশুদের জন্য কম মিষ্টি দিয়ে হালকা করে শরবত তৈরি করতে পারেন। 
  • ডায়াবেটিস রোগীরা চিনি বা গুড় এড়িয়ে শুধু লবণ বা জিরা দিয়ে খেতে পারে। 
সতর্কতা 
বেলের শরবতে বেশি চিনি ব্যবহার করা ঠিক নয় এতে ওজন বৃদ্ধি বা ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে। যারা অতিরিক্ত ঠান্ডা খেতে পারেন না তাদের জন্য ফ্রিজে রাখা শরবত না খাওয়াই ভালো। খুব বেশি পাকা বেল না খাওয়াই ভালো কারণ এতে অতিরিক্ত ফাইবার থাকার কারণে পেট ভার হতে পারে।

বেল সম্পর্কে শেষ কথা 

গরমে বেলের রস খাওয়ার উপকারিতা বেলের শরবত শুধু এক কাপ ঠান্ডা পানীয় নয় বরং এটি স্বাস্থ্যকর ও শক্তি দায়ক প্রাকৃতিক পানীয় যা গরমে শরীরকে ভিতর থেকে সতেজ রাখে। নিয়মিত বেলের শরবত খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্রীষ্মকালীন নানা স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্যই উপকারী। তাই চলুন গরমে প্রতিদিন এক গ্লাস বেলের শরবত খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলুন। (ধন্যবাদ)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url