ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য আজকের বিশ্বমানের যুগে অনেকেই নিজের দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে কাজ করতে চান। উন্নত জীবনযাত্রা ভালো উপার্জন এবং নতুন অভিজ্ঞতার আকাঙ্ক্ষা মানুষকে বিদেশে পাড়ি জামাতে উদ্বুদ্ধ করে। তবে বিদেশ কাজ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি হল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা।
এটি একটি বিশেষ ধরনের ভিসা যা কাউকে বিদেশে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন ও শর্ত অনুযায়ী এই ভিসা প্রদান করে।পেজসূচিপত্র: ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য .
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হলো এমন একটি বৈধ দলিল যা একজন বিদেশি নাগরিককে অন্য দেশের মাটিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাকরি করার অনুমোদন দেই। এটি অস্থায়ী হতে পারে আবার স্থায়ী ও হতে পারে নির্ভর করে ভিসার ধরন এবং কাজের প্রকৃতির উপর।
বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই ভিসা ধরন প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন কানাডা, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, কাতার, মালোশিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট পেতে হলে আলাদা আলাদা যোগ্যতা পূরণ করতে হয়।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রকারভেদ
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে
নিয়োগকর্তার নির্ভর এই ভিসা একজন নির্দিষ্ট নিয়োগ কর্তার অধীনে কাজ করার অনুমতি দেয়। এখানে কাজের ধরন সময়কাল ও কর্মস্থল পূর্ব নির্ধারিত থাকে। নিয়োগ কর্তার পক্ষ থেকে অফিসিয়াল জব অফার এবং স্পন্সরসিপ থাকতে হয়
ওপেন ওয়ার্ক পারমিট এই ভিসার মাধ্যমে যেকোনো নিয়োগ কর্তার অধীনে কাজ করা যায়। তবে এটি সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে দেওয়া হয়। যেমন শিক্ষার্থী বা স্থায়ী বাসিন্দার সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: বিদেশ যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে ঢোকার নিয়ম ও করণীয়
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয়তা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য কিছু মৌলিক যোগ্যতা নথিপত্রের প্রয়োজন হয়। যেমন
- বৈধ পাসপোর্ট
- প্রমাণিত চাকরির অফার লেটার
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- অভিজ্ঞতার সনদপত্র
- মেডিকেল রিপোর্ট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- আবেদন ফ্রি
- বায়োমেট্রিক তথ্য
ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার ধাপসমূহ
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য চাকরি খোঁজা ও অফার লেটার সংগ্রহ প্রথমেই আপনাকে সেই দেশে উপযুক্ত চাকরি খুজে বের করতে হবে এবং নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি অফার লেটার সংগ্রহ করতে হবে।
এল এম আই এ যদি প্রয়োজন হয় কানাডার মত কিছু দেশে নিয়োগ কর্তাকে সরকার থেকে এল এম আই এ অনুমোদন নিতে হয় যা প্রমাণ করে যে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করলে দেশীয় শ্রম বাজারে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
অনলাইনে আবেদন সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন জমা দিতে হয়।
নথীপত্র আপলোড ও ফি প্রদান প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে আপলোড করতে হয় এবং নির্ধারিত আবেদন ফি অনলাইনে পরিষদ করতে হয়।
ইন্টারভিউ প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হতে পারে।
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য ভিসা অনুমোদন ও ভ্রমণ ভিসা অনুমোদনের পর নির্দিষ্ট সময়ে দৃষ্টিতে গিয়ে কাজ শুরু করা যায়।
বিভিন্ন দেশের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ব্যবস্থাপনা
কানাডা কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া তুলনামূলক সহজ তবে নির্দিষ্ট নিয়োগ কর্তার অফার থাকতে হবে। ওপেন ওয়ার্ক পারমিট সাধারণত শিক্ষার্থীদের স্ত্রী/স্বামী বা অভিবাসন প্রক্রিয়াধীন ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য।
যুক্তরাজ্য তে ওয়ার্ক ভিসা নামে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু আছে যেখানে নির্দিষ্ট
ইস্কেল লেভেলের কাজ নির্ধারিত বেতন কাঠামো থাকতে হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে যেমন সৌদি কুয়েত কাতার এখানে সাধারণত স্পন্সর ভিত্তিক ভিসা প্রথা চালু নিয়োগ কর্তা ভিসা স্পন্সর করে ও কর্মীর থাকার ব্যবস্থা করে।
সুবিধা ও চ্যালেঞ্জসুবিধা ও বৈধ ভাবে বিদেশ কাজ করার সুযোগ উচ্চ হয় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সম্ভাবনা কিছু দেশে।
চ্যালেঞ্জ
কঠোর ভিসা প্রক্রিয়া ভাষাগত সমস্যা সংস্কৃতিগত ভিন্নতা চাকরি হারালে ভিসা বাতিলের ঝুঁকি নিয়োগ কর্তা নির্ভর ভিসা।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা শুধু একটি ভিসা নয় এটি একজন মানুষের জীবনের মোড় ঘরিয়ে দিতে পারে। যারা বিদেশে বৈধভাবে কাজ করতে চান তাদের জন্য এটি অন্যতম প্রধান পথ।। তবে আবেদন করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে সব নথিপত্র ঠিকভাবে প্রস্তুত করে আবেদন করা উচিত। সচেতনতা ও সঠিক প্রস্তুতি থাকলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া কোন অসম্ভব কাজ নয়।
রেসিডেন্সি ভিসা
রেসিডেন্সি ভিসা হলো এমন এক ধরনের ভিসা যা কোন বিদেশি নাগরিককে নির্দিষ্ট একটি দেশে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা কখনো কখনো স্থায়ীভাবে বসবাস করার অনুমতি প্রদান করে। এটি টুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা থেকে ভিন্ন কারণ এর মাধ্যমে ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদী বসবাস কাজ ব্যবসা পড়াশোনা বা পরিবারের সঙ্গে একত্রে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়।। অনেক দেশেই রেসিডেন্সি ভিসার মাধ্যমে প্রবাসীরা নাগরিকত্ব পাওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।
রেসিডেন্সি ভিসার ধরন
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য রেসিডেন্সি ভিসা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং তা নির্ভর করে ভিসা প্রদানকারী দেশের নিয়ম কানুন ও উদ্দেশ্যের উপর। সাধারণত যে ধরনের রেসিডেন্সি ভিসা দেখা যায় তা হল।
- ওয়ার্ক রেসিডেন্সি ভিসা কাজের জন্য কোন কোম্পানির স্পন্সরে পাওয়া যায়।
- স্টুডেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য দেওয়া হয়।
- বিজনেস বা ইনভেস্টর রেসিডেন্সি ভিসা ব্যবসা বা বিনিয়োগের ভিত্তিতে দেওয়া হয়।
- ফ্যামিলি রেসিডেন্সি ভিসা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য।
- হিউম্যানি টেরিয়ান বা রেফিউজি রেসিডেন্সি ভিসা বিসিএস মানবিক কারণে দেওয়া হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া রেসিডেন্সি ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া দেশ ভেদে ভিন্ন হলেও সাধারণত কিছু ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
আবেদনপত্র পূরণ সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন দপ্তরে নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হয়।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদান যেমন পাসপোর্ট ছবি মেডিকেল সার্টিফিকেট পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইনকাম প্রুফ ইত্যাদি। স্পন্সরশিপ বা কাজের প্রমাণ যদি কাজের ভিত্তিতে আবেদন করা হয় তবে নিয়োগ পত্র বা কোম্পানির স্পন্সর লেটার লাগবে।
আরো পড়ুন:
যারা কার্পেন্টার হিসেবে বিদেশ যাবেন তাদের জন্য
ভিসা ফি জমা দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হয় যা দেশভেদ ভিন্ন হয়।
ইন্টারভিউ ও যাচাই কখনো কখনো দূতাবাস বা কনসারভেটে ইন্টারভিউ দিতে হয়।
রেসিডেন্সি ভিসার সুবিধা রেসিডেন্সি ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা সেই দেশে কিছু বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। যেমন
দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের সুযোগ কাজ ও উপার্জনের বৈধতা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকা বা তাদের জন্য আবেদন করার সুযোগ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা কর সুবিধা ও ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ।
জনপ্রিয় দের কিছু দেশ যারা রেসিডেন্সির ভিসা প্রদান করে
- কানাডা এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রভিন্সিয়াল নমিনেশন প্রোগ্রাম পিএনপি স্টুডেন্ট বা ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে।
- অস্ট্রেলিয়া স্কিলড মাইগ্রেশন বিজনেস ইনোভেশন প্রোগ্রাম পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি।
- ইউ এস এ গ্রিন কার্ড লটারি ফ্যামিলি স্পন্সর চাকরি বা বিনিয়োগের মাধ্যমে।
- ইউরোপ ইউনিয়নের দেশসমূহ বিশেষ করে স্পেন পর্তুগাল জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস
- মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত যেখানে গোল্ডেন ভিসা চালু রয়েছে।
কিছু চ্যালেঞ্জ রেসিডেন্সি ভিসা আবেদনকারীকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন
দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া উচ্চ আবেদন খরচ ভাষাগত বাধা কাগজপত্রের কোন ত্রুটি হলে আবেদন বাতিল অভিবাসন নীতির পরিবর্তন।
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য গোল্ডেন রেসিডেন্সি ভিসা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক দেশ গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা মূলত ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য। এ ধরনের ভিসার মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে কেউ দ্রুত রেসিডেন্সি বা নাগরিকত্ব পেতে পারেন যেমন পর্তুগাল গ্রিস স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
শেষ কথা
ওয়ার্ক পারমিট বনাম রেসিডেন্সি ভিসার পার্থক্য রেসিডেন্সি ভিসা শুধুমাত্র একটি বসবাসের অনুমতি নয় এটি একটি সুযোগ নতুন জীবন শুরু করার ।পরিবারকে ভালো পরিবেশে আনার পেশাগত উন্নয়ন সাধনের এবং ভবিষ্যতের স্থায়ী নাগরিকত্বের পথে এগিয়ে যাওয়ার। তবে এর জন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি সঠিক তথ্য এবং ধৈর্য। যারা বিদেশে দীর্ঘমেয়াদী জীবন গড়তে চান তাদের জন্য রেসিডেন্সি ভিসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url