সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা টমেটো একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সবজি যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়া আরও বেশি উপকারী হতে পারে।
পেজসূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা .
ভূমিকা
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে এই আটিকেলটি আপনার
জন্য এই আটিকেলটিতে টমেটো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। টমেটো স্বাস্থ্যের জন্য
অত্যন্ত উপকারী এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হৃদরোগ ক্যান্সার প্রতিরোধ
এবংত্বকে চুলের যত্নে সাহায্য করে এটি সঠিকভাবে খাওয়ার পাশাপাশি সুস্থ জীবন ধারা
বজায় রাখা জরুরী। টমেটো সম্পর্কে আরও জানতে এই আটিকেলটি শুরু থেকে শষ পর্যন্ত
পড়ুন।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
হজম ক্ষমতা বাড়ায় টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং পানির উপস্থিতি রয়েছে যা হজম ক্ষমতা উন্নত করে। সকালে খালি পেটে এটি খেলে অন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা কমে যায়। এছাড়া এটি প্রাকৃতিক ভাবে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে।
ওজন কমাতে সহায়ক ওজন কমানোর জন্য টমেটো একটি আদর্শ খাবার। এতে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার ও পানি বেশি থাকে যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে টমেটো খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে যায়।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ভিটামিন সি এবং অন্যান্য এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি ত্বকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং বলিরেখা ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। খালি পেটে টমেটো খেলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায় যা ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে।
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায় টমেটোতে পটাশিয়াম ও লাইকোপিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
আরো পড়ুনঃ আতা গাছের পাতার ১০ টি উপকারিতা
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক টমেটোর প্রধান উপাদান লাইকোপিন যা শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যান্সার কোষ গঠনের ঝুঁকি কমায় বিশেষ করে প্রস্টেট ফুসফুস এবং পাকিস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি কার্যকর।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে টমেটোতে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে সকালে খালি পেটে টমেটো খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা চোখের জন্য উপকারী টমেটোতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন লুটেইন ও জেক্সানথিন চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং রাতকানা ও চোখের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
টমেটো খেলে কি ঠান্ডা লাগে
টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি বা ফল যা সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহৃত হয়। এটি পুষ্টিগুনে ভরপুর শরীরের জন্য উপকারী হলেও অনেকের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে টমেটো খেলে ঠান্ডা লাগে তবে আসলেই কি টমেটো খাওয়ার কারণে ঠান্ডা লাগতে পারে এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং প্রচলিত বিশ্বাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়।
টমেটোর পুষ্টিগুন ও ঠান্ডা অনুভূতি টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ভিটামিন এ পটাশিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং অনেক উপকারী যোগ থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু টমেটোর প্রকৃতি কিছুটা ঠান্ডা প্রকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা অনেক শীতল প্রকৃতির খাবার যেমন শসা তরমুজ টমেটো ইত্যাদি দেহকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টমেটো খেলে ঠান্ডা অনুভূতি বা হালকা সর্দি হতে পারে। তবে এটি প্রত্যেকের শরীরে প্রকৃতি ও সহ্য ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
ঠান্ডা লাগার সম্ভাব্য কারণ
অ্যাসিডিটির কারণে গলা ব্যথা টমেটোতে উচ্চ পরিমাণে সাইট্রিক এসিড এবং অ্যাসকরবিক থাকে যা কখনো কখনো গলার সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে যদি কারো গলা আগে থেকেই একটু দুর্বল হয় বা সংক্রমণ থাকে তবে টমেটো খাওয়ার পরে অনুভূতি হতে পারে।
শীতল প্রকৃতির খাবার হিসেবে প্রভাব আয়ুর্বেদ মতে টমেটো এক ধরনের শীতল খাবার যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে পারে। তাই যদি কেউ শীতের মৌসুমে বা রাতে বেশি পরিমাণে কাঁচা টমেটো খান তবে তার দেহের উষ্ণতা কিছুটা কমে গিয়ে ঠান্ডা লাগার অনুভূতি হতে পারে।
টমেটোর সঙ্গে ঠান্ডা পানি বা দই খাওয়া অনেক সময় টমেটোর সালাত বা খাবার তৈরি সময় এটি দই ঠাণ্ডা পানিয় বা অন্যান্য শীতল উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এটি শরীরকে আরো ঠান্ডা করে দিতে পারে যা ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
কিভাবে টমেটো খেলে ঠান্ডায় এড়ানো যায়
রান্না করে খাওয়া কাঁচা টমেটোর তুলনায় রান্না করা টমেটো শরীরের জন্য সহজ হজম যোগ্য এবং কম শীতল প্রকৃতির হয় তাই যাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি তারা টমেটো বা রান্না করে টমেটো খেতে পারেন।
গরম মসলার সঙ্গে খাওয়া টমেটো ঠান্ডা প্রভাব কমাতে এটি আদা রসুন গোলমরিচ বা হলুদের সঙ্গে রান্না করা যেতে পারে। এসব উপাদান উষ্ণ প্রকৃতির যা শরীরকে ঠান্ডা হওয়ার পরিবর্তে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খাওয়ার বদলে পরিমিত খাওয়া ভালো বিশেষত শীতের দিনে বা রাতে বেশি কাঁচা টমেটো না খাওয়াই উত্তম।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা গরম পানির সঙ্গে গ্রহণ যদিও কেউ কাঁচা টমেটো খান তবে পরে গরম পানি বা উষ্ণ তরল গ্রহণ করলে শরীরে ঠান্ডা কম অনুভূত হতে পারে।
টমেটো একটি পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের জন্য উপকারী তবে এটি শীতল প্রকৃতির হওয়ায় কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঠান্ডাও অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে বিশেষ করে যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে ঠান্ডা খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়। তবে সবার শরীর এক রকম নয়, তাই সবার ক্ষেত্রে একই রকম প্রতিক্রিয়া হবে না। যদিও টমেটো খাওয়ার পর ঠাণ্ডা বা সর্দির সমস্যা দেখা দেয় তবে এটি কম পরিমাণে খাওয়া এবং গরম খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করাই ভালো।
কোম্পানির তৈরি টমেটোর সস খেলে সম্ভাব্য ক্ষতি
টমেটোর সস একটি জনপ্রিয় প্রসেসড খাবার যা প্রায় প্রতিটি রান্নাঘরে পাওয়া যায়। এটি পাস্তাসহ বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। তবে বাজারে পাওয়া কোম্পানির তৈরি টমেটোর সস নিয়মিত খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। অনেক কোম্পানি তাদের টমেটোর সস সংরক্ষণ ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে। এসব উপাদান দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের উপর নিতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অতিরিক্ত চিনি ও উচ্চ ক্যালরি কোম্পানির তৈরির টমেটো সসের সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যা খাবারের স্বাদ উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়। তবে অতিরিক্ত চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এটি ওজন বৃদ্ধির ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সৃষ্টি করতে পারে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম টমেটোর সস সংরক্ষণ যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তাতে উচ্চমাত্রার
লবণ সোডিয়াম যোগ করা হয়। অতিরিক্ত সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে যা
পরবর্তী সময়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
প্রতিদিন মাত্র পাঁচ গ্রাম লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেয় কিন্তু কোম্পানির তৈরি সসে
এই সীমা দ্রুত ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সংরক্ষণকারী রাসায়নিক ও ক্ষতিকর উপাদান
কোম্পানির তৈরি টমেটোর সসে ফিজারভেটিভ সংরক্ষণকারী রাসায়নিক ও কৃত্রিম রঙ এবং সাদবর্ধক উপাদান ব্যবহার করা হয় যেমন।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সোডিয়াম বেঞ্জয়েড এটি একটি সাধারণ সংরক্ষণকারী যা শরীরে জমে গিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মনোসডিয়াম গৃলুটামেট এটি এক ধরনের স্বাদ বর্ধক যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে মাথা ব্যথা ও দুর্বলতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ নেসমা কোম্পানি সৌদি আরব কর্মী নিয়োগ ২০২৫
এ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যা, টমেটোতে প্রাকৃতিক ভাবেই এসিড থাকে যা প্রক্রিয়াজাত করার পর আরও সংরক্ষণশীল উপাদানের কারনে বেড়ে যেতে পারে। নিয়মিত কোম্পানির তৈরি টমেটোর সস খেলে পেটের গ্যাস অম্লতা এসিডিটি ও হজমের সমস্যা হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি বিশেষ ভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।
কিভাবে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া যায়
গৃহে তৈরি টমেটোর সস ব্যাবহার করা উত্তম এতে রাসায়নিক উপাদান কম থাকে এবং স্বাদ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- সোডিয়াম ও সুগার সস খোঁজার চেষ্টা করুন।
- উপাদান তালিকা পরীক্ষা করুন এবং কৃত্রিম রং ও সংরক্ষণকারী পদার্থ এড়িয়ে চলুন।
- শ্বাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন অর্থাৎ অল্প পরিমানে ব্যবহার করুন।
কোম্পানির তৈরি টমেটোর মাঝে মাঝে খাওয়া সমস্যা নয় তবে নিয়মিত খেলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি লবণ কৃত্রিম সংরক্ষণকারী ও স্বাদবর্ধক উপাদান শরীরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদের ক্ষতিকর হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে যদি আপনি প্রাকৃতিক ও ঘরে তৈরি বিকল্প বেছে নিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url